কনিক (Conics)

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - উচ্চতর গণিত - উচ্চতর গণিত – ২য় পত্র | | NCTB BOOK
56
56

কনিক (Conics) হল গাণিতিক বিশেষণ যা বিভিন্ন ধরনের রেখার বা কার্ভের একটি গ্রুপকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা একটি কনিকে তৈরি হয়। কনিকের মধ্যে প্রধানত ৪টি ধরনের গাণিতিক আকার রয়েছে:

১. পরাবৃত্ত (Ellipse) – এটি একটি দ্বি-মাত্রিক উপবৃত্তাকার আকার, যেখানে দুটি ফোকাল পয়েন্ট থাকে এবং প্রতিটি বিন্দু এই দুটি ফোকাল পয়েন্টের সমষ্টিগত দৈর্ঘ্য সমান থাকে।

২. বৃত্ত (Circle) – এটি একটি বিশেষ ধরনের পরাবৃত্ত যা সব দিক থেকে সমান দৈর্ঘ্যের। বৃত্তের সকল পয়েন্ট কেন্দ্র থেকে সমান দুরত্বে অবস্থিত।

৩. অর্ন্তবৃত্ত (Hyperbola) – এটি দুটি ভিন্ন ভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত যা সমান্তরাল রেখা এবং কিছু নির্দিষ্ট ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে সৃষ্টি হয়।

৪. অবতল পরাবৃত্ত (Parabola) – এটি একটি বাঁকা রেখা যা একটি একক ফোকাল পয়েন্টের সাথে সম্পর্কিত এবং অক্ষের সাথে একটি নির্দিষ্ট কোণে থাকে।

এই কনিকের সমীকরণগুলি সাধারণত দ্বিতীয় ডিগ্রি সমীকরণ হিসেবে প্রকাশ করা হয় এবং এটি বিশেষভাবে ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ও ক্যালকুলাসের নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

পরাবৃত্ত

31
31

পরাবৃত্ত (Ellipse) হলো কনিকের একটি বিশেষ ধরনের আকার, যা দুটি ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে এমন একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করে যে, এর যেকোনো বিন্দুর জন্য দুই ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে দূরত্বের যোগফল সবসময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে। পরাবৃত্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গাণিতিক ব্যাখ্যা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

পরাবৃত্তের গঠন

একটি পরাবৃত্ত দুটি প্রধান অক্ষ দ্বারা গঠিত:

  1. প্রধান অক্ষ (Major Axis): এটি পরাবৃত্তের দীর্ঘতম রেখা। এটি পরাবৃত্তের কেন্দ্রে দিয়ে যায় এবং দুটি শেষ বিন্দু (ফোকাস) থাকে এর উপর।
  2. সাহায্যকারী অক্ষ (Minor Axis): এটি পরাবৃত্তের সবচেয়ে ছোট রেখা, প্রধান অক্ষের perpendicular এবং এটি পরাবৃত্তের কেন্দ্রে দিয়ে যায়।

পরাবৃত্তের সমীকরণ

পরাবৃত্তের সমীকরণটি দুটি অক্ষের দৈর্ঘ্য ও কেন্দ্রে দুটি ফোকাল পয়েন্টের অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে লেখা হয়। একটি সাধারণ পরাবৃত্তের সমীকরণ হলো:

\[
\frac{x^2}{a^2} + \frac{y^2}{b^2} = 1
\]

এখানে:

  • \(a\) হলো প্রধান অক্ষের অর্ধদৈর্ঘ্য।
  • \(b\) হলো সাহায্যকারী অক্ষের অর্ধদৈর্ঘ্য।
  • \(x\) এবং \(y\) হলো পরাবৃত্তের একটি পয়েন্টের স্থানাঙ্ক।

যদি \(a > b\), তাহলে পরাবৃত্তটি অনুভূমিকভাবে বিস্তৃত থাকে, এবং যদি \(b > a\), তাহলে এটি উল্লম্বভাবে বিস্তৃত থাকে।

পরাবৃত্তের বৈশিষ্ট্য

  1. ফোকাস (Foci): পরাবৃত্তের দুটি ফোকাল পয়েন্ট থাকে, যেগুলি প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত। পরাবৃত্তের সব পয়েন্টের জন্য, দুই ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে দূরত্বের যোগফল সবসময় সমান।
  2. পেরিমিটার (Perimeter): পরাবৃত্তের পেরিমিটার বা পরিধি গণনা করা খুবই জটিল, কারণ এটি সোজাসুজি সমীকরণের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় না। তবে, এটি আনুমানিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব।
  3. কেন্দ্র (Center): পরাবৃত্তের কেন্দ্র দুটি অক্ষের ছেদবিন্দুতে অবস্থিত।
  4. অক্ষের সম্পর্ক: পরাবৃত্তের প্রধান অক্ষ \(a\) এবং সাহায্যকারী অক্ষ \(b\) এর মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। এটি ফোকাল দৈর্ঘ্য \(c\) এর সাথে সম্পর্কিত, যেখানে:

\[
c = \sqrt{a^2 - b^2}
\]

এখানে \(c\) হলো ফোকাল পয়েন্টের কেন্দ্র থেকে পরাবৃত্তের কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব।

পরাবৃত্তের ব্যবহার

পরাবৃত্তের বিভিন্ন বাস্তব জীবনের প্রয়োগ রয়েছে:

  • বৈজ্ঞানিক গবেষণা: গ্রহের কক্ষপথ ও বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুর গতিবিধি পরাবৃত্তীয় হয়। সূর্য এবং অন্যান্য তারা পরাবৃত্তে ঘুরে।
  • অভিযান ও মহাকাশ: মহাকাশ অভিযানে যানবাহনগুলি পরাবৃত্ত কক্ষপথে চলতে পারে।
  • অভ্যন্তরীণ প্রকৌশল: কিছু যন্ত্রাংশ এবং ডিজাইনে পরাবৃত্তীয় আকার ব্যবহার করা হয়, যেমন উপকরণে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে।

এইভাবে পরাবৃত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধারণা এবং বাস্তব জীবনে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।

উপবৃত্ত

41
41

উপবৃত্ত (Hyperbola) হলো কনিকের একটি বিশেষ ধরনের আকার, যা দুটি পৃথক শাখার দ্বারা গঠিত। এটি একটি গাণিতিক বক্ররেখা, যা দুটি ফোকাল পয়েন্টের সাথে সম্পর্কিত এবং এটি দুইটি শাখায় বিভক্ত থাকে। উপবৃত্তের বৈশিষ্ট্য এবং গাণিতিক ব্যাখ্যা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

উপবৃত্তের গঠন

একটি উপবৃত্ত দুটি প্রধান শাখা নিয়ে গঠিত, যেগুলি মূলত দুটি পৃথক কনিকে তৈরি হয়। উপবৃত্তের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যে এটি একটি নির্দিষ্ট মানের সাথে সম্পর্কিত যেখানে কোনো বিন্দু থেকে দুটি ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে দূরত্বের পার্থক্য সবসময় একটি নির্দিষ্ট মানে থাকে।

উপবৃত্তের সমীকরণ

একটি সাধারণ উপবৃত্তের সমীকরণ হলো:

\[
\frac{x^2}{a^2} - \frac{y^2}{b^2} = 1
\]

এখানে:

  • \(a\) হলো উপবৃত্তের প্রধান অক্ষের অর্ধদৈর্ঘ্য।
  • \(b\) হলো উপবৃত্তের সাহায্যকারী অক্ষের অর্ধদৈর্ঘ্য।
  • \(x\) এবং \(y\) হলো উপবৃত্তের একটি পয়েন্টের স্থানাঙ্ক।

যদি \(x^2/a^2 - y^2/b^2 = 1\) সমীকরণটি পূর্ণ হয়, তবে এটি একটি উপবৃত্তের সমীকরণ। উপবৃত্তের শাখাগুলি \(x\)-অক্ষের সাথে সম্পর্কিত থাকে, এবং এটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়।

উপবৃত্তের বৈশিষ্ট্য

  1. ফোকাস (Foci): উপবৃত্তের দুটি ফোকাল পয়েন্ট থাকে, যা একে অপর থেকে দূরত্ব \(2c\) থাকে। ফোকাল পয়েন্টগুলি মূলত দুটি শাখার কাছাকাছি অবস্থিত এবং তাদের অবস্থান উপবৃত্তের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে থাকে।
  2. অ্যাসিম্পটোটস (Asymptotes): উপবৃত্তের দুটি প্রধান শাখার মধ্যবর্তী রেখাগুলি একে অপরকে অপ্রতিসাম্যভাবে ছেদ করে, যার সাথে উপবৃত্তের শাখাগুলির মিল রয়েছে। এই রেখাগুলি আসিম্পটোটস হিসেবে পরিচিত, এবং এগুলি উপবৃত্তের শাখাগুলির জন্য একটি সীমা তৈরি করে।
  3. ফোকাল দৈর্ঘ্য (Focal Length): উপবৃত্তের ফোকাল দৈর্ঘ্য \(c\) এর সাথে সম্পর্কিত এবং এটি নিম্নলিখিত সমীকরণ দ্বারা নির্ধারিত হয়:

\[
c = \sqrt{a^2 + b^2}
\]

এখানে \(c\) হলো ফোকাস থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব।

  1. কেন্দ্র (Center): উপবৃত্তের কেন্দ্র হলো দুটি ফোকাল পয়েন্টের মধ্যবর্তী বিন্দু। এটি সমীকরণের শূন্যস্থান হিসেবে চিহ্নিত থাকে।

উপবৃত্তের ব্যবহার

উপবৃত্তের বিভিন্ন বাস্তব জীবনের প্রয়োগ রয়েছে, বিশেষত গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে:

  • যানবাহন: মহাকাশে অভিযানকারী যানবাহন বা স্যাটেলাইটগুলির কিছু কক্ষপথ উপবৃত্তীয় হয়।
  • অপটিক্স: কিছু পর্দা বা লেন্স ডিজাইনে উপবৃত্ত ব্যবহার করা হয়, যেমন পর্দা বা কনভেক্স লেন্সের আকার নির্ধারণে।
  • দূরত্ব পরিমাপ: কিছু যন্ত্রের মধ্যে উপবৃত্তীয় রেখা ব্যবহার করা হয়, যেমন রাডার প্রযুক্তিতে।

এইভাবে, উপবৃত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কনিক এবং বাস্তব জীবনে এর অনেক ব্যবহার রয়েছে।

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

অধিবৃত্ত

16
16

অধিবৃত্ত (Parabola) হলো কনিকের আরেকটি বিশেষ ধরনের আকার, যা একটি বাঁকা রেখা হিসেবে পরিচিত। এটি এমন একটি গাণিতিক আকার, যার প্রতিটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট ফোকাল পয়েন্ট এবং একটি নির্দিষ্ট রেখা (ডিরেকট্রিক্ট) থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে। অধিবৃত্তের গঠন এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি বিস্তারিত আলোচনা এখানে করা হলো।

অধিবৃত্তের গঠন

অধিবৃত্তের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি বাঁকা রেখা যা একটি ফোকাল পয়েন্ট এবং একটি ডিরেকট্রিক্ট (নির্দেশক রেখা) এর সাথে সম্পর্কিত। একটি অধিবৃত্তের প্রতিটি বিন্দু ফোকাল পয়েন্ট এবং ডিরেকট্রিক্টের সাথে সমান দূরত্বে থাকে। অধিবৃত্তটি একক শাখায় বিভক্ত থাকে এবং এটি একটি "U" আকৃতির বক্ররেখা তৈরি করে।

অধিবৃত্তের সমীকরণ

অধিবৃত্তের সাধারণ সমীকরণ হলো:

\[
y^2 = 4ax
\]

এখানে:

  • \(a\) হলো ফোকাল পয়েন্টের থেকে অধিবৃত্তের শাখার দূরত্বের অর্ধদৈর্ঘ্য।
  • \(x\) এবং \(y\) হলো অধিবৃত্তের একটি পয়েন্টের স্থানাঙ্ক।

এছাড়া, যদি অধিবৃত্তটি উল্লম্বভাবে বিস্তৃত থাকে (অথবা \(y\)-অক্ষ বরাবর), তবে এর সমীকরণ হবে:

\[
x^2 = 4ay
\]

এখানে \(a\) হলো ফোকাল পয়েন্টের থেকে ডিরেকট্রিক্টের দূরত্ব।

অধিবৃত্তের বৈশিষ্ট্য

  1. ফোকাল পয়েন্ট (Focus): অধিবৃত্তের একটি ফোকাল পয়েন্ট থাকে, যা এই আকারের কেন্দ্র। এটি মূলত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু, যেখান থেকে অধিবৃত্তের প্রতিটি বিন্দু সমান দূরত্বে থাকে।
  2. ডিরেকট্রিক্ট (Directrix): এটি একটি রেখা যা অধিবৃত্তের শাখার বিপরীত দিকে অবস্থিত এবং এটি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ফোকাল পয়েন্টের সম্পর্কিত। অধিবৃত্তের প্রতিটি বিন্দু ফোকাল পয়েন্ট এবং ডিরেকট্রিক্টের কাছাকাছি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করে।
  3. অক্ষ (Axis): অধিবৃত্তের একটি অক্ষ থাকে, যা ফোকাল পয়েন্ট এবং ডিরেকট্রিক্টের মাঝে সোজা রেখা হিসেবে কাজ করে। এটি সাধারণত \(x\)-অক্ষ বা \(y\)-অক্ষ হতে পারে।
  4. কেন্দ্র (Vertex): অধিবৃত্তের শাখা যেখানে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে, সেটি কেন্দ্র বা শীর্ষ (vertex) হিসেবে পরিচিত।
  5. বিকৃতি (Latus Rectum): এটি একটি রেখা যা ফোকাল পয়েন্টের উপর দিয়ে চলে এবং অধিবৃত্তের শাখার প্রতি থাকে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক উপাদান, যার দৈর্ঘ্য \(4a\) হয়।

অধিবৃত্তের ব্যবহার

অধিবৃত্তের বিভিন্ন বাস্তব জীবনে ব্যবহার রয়েছে, বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিক্স এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে:

  1. অপটিক্স: অধিবৃত্তকে বিভিন্ন অপটিক্যাল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়, যেমন টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ, এবং ফোকাসিং ডিভাইসগুলিতে। অধিবৃত্তের ফোকাল পয়েন্টে আলো সঞ্চালন করা যায়।
  2. গোলমাল ও রাডার প্রযুক্তি: অধিবৃত্তের আকারে গোলমাল বা সংকেত বিচ্ছিন্ন করা যায়। যেমন, কিছু স্যাটেলাইট সিগন্যাল বা রাডারের ব্যবহারে অধিবৃত্তের আকারের রেফ্লেক্টর ব্যবহার করা হয়।
  3. বিকল্প ইঞ্জিনিয়ারিং: অধিবৃত্ত আকারে ডিজাইন করা স্লাইডিং ডোর, ব্রিজ আর্ক, এবং অন্যান্য কাঠামোগত অংশ তৈরি করা হয়।
  4. মাধ্যম ও চলন: ক্রীড়ায় যেমন বল ফেলার বা প্রক্ষেপণের সময় অধিবৃত্তীয় কক্ষপথে বস্তু চলতে পারে, বিশেষত গুলি বা মিসাইল ছোঁড়ার ক্ষেত্রে।

এভাবেই অধিবৃত্তের আকার এবং এর বৈশিষ্ট্য গাণিতিক এবং বাস্তব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Promotion